প্রকাশ: শুক্রবার, ৭ মে, ২০২১, ১২:০০ এএম | অনলাইন সংস্করণ
বেলাল তালুকদার, তাজাখবর২৪.কম,মৌলভীবাজার: ঈদের আগে মজুরি ও বোনাস প্রদান এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের কাজ, খাদ্য ও চিকিৎসা নিশ্চয়তা এবং রেশনিং চালুর দাবি মৌলভীবাজার ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের। আসন্ন ঈদুল ফিতরের কমপক্ষে এক সপ্তাহ পূর্বে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও বোনাস (উৎসব ভাতা) পরিশোধ এবং লকডাউনের কারণে কর্মচ্যুত ও কর্মহীন শ্রমিক-শ্রমজীবীদের নগদ অর্থ সহায়তা প্রদানের দাবি করেছেন বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের মৌলভবাজার জেলা কমিটির সভাপতি মোঃ নুরুল মোহাইমীন এবং সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাস। ৭ মে শুক্রবার পাঠানো একযুক্ত বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন- করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকার গত ৫ এপ্রিল হতে লকডাউন ঘোষণা করেছেন। অথচ সরকার শ্রমিক ও শ্রমজীবীদের জীবন ও জীবিকার কোন ব্যবস্থা করেনি। করোনা দূর্যোগের কারণে গত বছরও প্রায় তিন মাস হোটেল-রেস্টুরেন্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। এবছর ৫ এপ্রিল হতে অধিকাংশ হোটেল রেস্টুরেন্ট, দুরপাল্লার গণপরিবহণ, যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ থাকায় এবং অপ্রতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের কর্মজীবী অনেক মানুষ কর্মহীন হয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বিভিন্ন পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে করোনার কারণে নতুন করে গত এক বছরে আড়াই কোটি মানুষ বেকার হয়েছেন এবং ৪২ শতাংশ শ্রমিকের আয় আগের তুলনায় কমেছে। ৭৮ শতাংশ পরিবার বেঁচে থাকার মত ন্যূনতম খাবার ও শিশু খাদ্য জুটাতে পারছে না। এর বিপরীতে করোনাকালীন সময়ে ব্যাপক লুটপাটের ফলে ২০২০ সালে দেশে ১০ হাজার ৫১ জন নতুন কোটিপতির সৃস্টি হয়েছে। এভাবে দেশ ভারসাম্যহীন এক ব্যাপক বৈষম্যমূলক সমাজের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। দেশে গরীব মানুষের সংখ্যা বাড়লেও সরকারিভাবে গত বছর ৫০ লাখ পরিবারকে নগদ ২৫০০ টাকা সহযোগিতার ঘোষণা দেওয়া হলেও এবছর তা কমিয়ে ৩৬ লাখ করা হয়েছে। আর এই ৩৬ লাখ দরিদ্র পরিবারের সহযোগিতা যে গত বছরের ন্যায় পক্ষপাতীত্ব, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দূর্নীতিতে শেষ হবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সরকার শ্রমিক-শ্রমজীবীদের জীবন জীবিকার নিশ্চয়তার বিধান করতে পারলেও গার্মেন্টস মালিকদের জন্য নানারকম প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সুযোগ সুবিধা ও আর্থিক প্রণোদনা অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু শ্রমিক ও শ্রমজীবীদের এই দুঃসহ সময়ে না কোন মালিক তাদের সহায়তা করছেন; না তারা পাচ্ছেন সরকারি সহায়তা। শ্রমিক ও শ্রমজীবীদের জীবন ও জীবিকার নিশ্চয়তা বিধান না করে লকডাউন চাপিয়ে দেওয়া সরকারের দায়হীনতার পরিচয় বহন করে। নেতৃবৃন্দ করোনার দূর্যোগকালে চা ও রাবার শ্রমিকদের জন্য পর্যাপ্ত স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা না করা এবং ৫ মাস অতিবাহিত হতে চললেও মজুরি বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। মোটা চালের কেজি ৫০ টাকাসহ সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊদ্ধগতির সময়ে চা-শ্রমিকদের সর্বোচ্চ দৈনিক মজুরি মাত্র ১২০ টাকা। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ৬/৭ জনের একটি শ্রমিক পরিবার সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে চা-শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬৭০ টাকার নির্ধারণ করার দাবি জানান। আসন্ন ঈদুল ফিতরের কমপক্ষে এক সপ্তাহ পূর্বে প্রাতিষ্ঠানিক-অপ্রাতিষ্ঠানিক নির্বিশেষে সকল শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি ও বোনাস (উৎসব ভাতা) প্রদান এবং বন্ধ পাটকল ও চিনিকল শ্রমিকদের সকল পাওনাদি পরিশোধ, সকল ধরনের ছাঁটাই ও লে-অফ বন্ধ, হোটেল-রেস্টুরেন্ট, নৌযানসহ সকল ধরনের পরিরহন, স’মিল, পাদুকা,বেকারি, বারকি, লোকাল গার্মেন্টস, দর্জি, মুদ্রণ, পুস্তক বাঁধাই, নির্মাণ, পরিচ্ছনতা কর্মী, গৃহকর্মী, রিকশা-ঠেলা-ভ্যান শ্রমিক, হকারসহ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সকল শ্রমিকদের কাজ, খাদ্য, চিকিৎসার নিশ্চয়তা ও রেশন চালুর দাবি জানান।
তাজাখবর২৪.কম: ঢাকা শুক্রবার ০৭ মে ২০২১ ২৪ বৈশাখ ১৪২৮,২৪ রমজান ১৪৪২