আপলোড তারিখ : 2020-04-18
করোনাভাইরাসের বেঁচে থাকার স্থায়ীত্বতা
করোনাভাইরাসের বেঁচে থাকার স্থায়ীত্বতা-ছবি: ইন্টানেট।তাজাখবর২৪.কম,ডেস্ক: বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস আতংক বিরাজ করছে। তামা, প্লাস্টিক, কার্ডবোর্ড ইত্যাদি ভেদে করোনাভাইরাসের আয়ু কম বেশি হয়।
দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি প্রতিদিনই মারাত্বক হারে খারাপের দিকে যাচ্ছে, বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর মিছিল। দেশের সচেতন মানুষ মাত্রই ঘরে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

এমন পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) বলছে, ‘ডায়মন্ড প্রিন্সেস’ নামক একটি প্রমোদতরীতে করোনাভাইরাসের ‘আরএনএ’ পাওয়া গেছে। এই জাহাজটি ১৭ দিন অব্যবহৃত অবস্থায় রাখা ছিল।”

নতুন এই খবর থেকে নতুন করে প্রশ্ন জেগেছে কতদিন এই ভাইরাসের অস্তিত্ব থাকতে পারে বিভিন্ন স্থানে?

দ্য গার্ডিয়ান’য়ের একটি প্রতিবেদনে এবিষয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর জানিয়েছেন ইয়েল ইউনিভার্সিটির ‘ইমিউনোলাজি’ বিভাগের অধ্যাপক ডা. আকিকো ইওয়াসাকি এবং হার্ভার্ড মেডিকাল স্কুলের ‘ডিপার্টমেন্ট অফ পপুলেশন মেডিসিন’ বিভাগের অধ্যাপক এবং ‘ইনফেকশাস ডিজিজ এপিডেমিওলজিস্ট’ ডা. জুলিয়া মার্কাস।

ওই জাহাজের খবরের ভিত্তিতে কী বলা যায় যে করোনাভাইরাস ১৭ দিন পর্যন্ত বাঁচতে পারে?

ডা. জুলিয়া মার্কাস বলেন, “সিডিসি’র তদন্তে সেই জাহাজের সেসব কেবিনে ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে যা তখন পর্যন্ত পরিষ্কার করা হয়নি। এথেকে বলা যায় যে ১৭ দিন পরও করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্তযোগ্য, তবে এটা বলা যাবেনা যে জাহাজের ওই ভাইরাসগুলো তখনও সংক্রমণের ক্ষমতা রাখে কি না।”

ডা. আকিকো ইওয়াসাকি বলেন, “এই খবর থেকে বোঝা যায় যে ভাইরাসের কিছু অংশ সেখানে তখনও বিদ্যমান। তবে তার পরিপূর্ণ হতে হলে আরও অনেকগুলো অংশের প্রয়োজন। করোনাভাইরাসের ‘আরএনএ’য়ের অবশিষ্টাংশ নতুন ভাইরাস তৈরি করতে পারেনা, তার জন্য প্রয়োজন পুরো ভাইরাসের অক্ষত ‘জিনোম’। অর্থাৎ ভাইরাসের অংশবিশেষ পাওয়া যাওয়ার মানে এই নয় যে তা থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি আছে।”

বিভিন্ন সমতলে ভাইরাস কত সময় বাঁচে?

ডা. জুলিয়া মার্কাস বলেন, “এই বিষয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকাশ হয় ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’য়ে। ল্যাবরেটরিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে তামার ওপর করোনাভাইরাস চার ঘণ্টা পরও শনাক্তযোগ্য। কার্ডবোর্ডে প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত আর প্লাস্টিক ও স্টিল সমতলে প্রায় ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত এই ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত করা যায়।

উল্লেখ্য, সকল স্থানেই ভাইরাসের সংখ্যা খুব দ্রুত কমে আসতে দেখা গেছে। ফলে সেই স্থানগুলো স্পর্শ করার কারণে সংক্রমণের ঝুঁকি খুব দ্রুত কমে যায়।

করোনাভাইরাসের একটি অংশ দিয়েই কী সংক্রমন হওয়া সম্ভব?

ডা. আকিকো ইওয়াসাকি বলেন, “সফল সংক্রমণের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাইরাসের সংস্পর্শে আসতে হবে। আপনার হাতের আঙুলে ভাইরাসের একটি অংশ লেগে থাকলেই তা থেকে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা কম। কিছু ভাইরাস হয় অত্যন্ত সক্রিয়, ১০টি ‘পার্টিকেল’ই যথেষ্ট সংক্রমণের জন্য। আবার কিছু থাকে দুর্বল, সংক্রমণের জন্য প্রয়োজন হয় কয়েক লাখ ভাইরাস। যত কম সংখ্যক ভাইরাসের সংস্পর্শে আসা হবে, সংক্রমণের ঝুঁকি ততই কম হবে। আর এজন্য বিভিন্ন সমতলে কত সংখ্যক ভাইরাস সক্রিয় থাকতে পারছে সেই সংখ্যাটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

প্রচলিত মাধ্যমগুলোর বিপরীতে বিভিন্ন সমতলে থাকা করোনাভাইরাসের মাধ্যমে কত সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বলে মনে করেন?

ডা. জুলিয়া মার্কাস বলেন, “এখন পর্যন্ত জানা তথ্য মতে, আক্রান্ত ব্যক্তির কাছাকাছি থাকার মাধ্যমেই মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। তারপরও যেসব স্থান বহুবার বহু মানুষ স্পর্শ করে সেগুলো সম্পর্ক আমাদের সচেতন থাকতেই হবে। সেগুলো স্পর্শ করার পর হাত ধুতে হবে। বিশেষ করে গণপরিবহন ও বাজার এক্ষেত্রে সবচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান।

ডা. আকিকো ইওয়াসাকি বলেন, “প্লাস্টিক আর স্টিল সমতলে লম্বা সময় সক্রিয় থাকতে পারে করোনাভাইরাস। তাই কোনো আক্রান্ত ব্যক্তি এসবে তৈরি যেকোনো বস্তু স্পর্শ করলে তাতে ভাইরাস থাকতে পারে এবং কোনো সুস্থ ব্যক্তি ওই স্থান স্পর্শ করার পর তার চেহারা স্পর্শ করলে সংক্রমিত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থেকেই যায়। বাজার-সদাই কিংবা যেকোনো প্যাকেটের মাধ্যমে সংক্রমণের শিকার হওয়ার ঝুঁকি কতটুকু?

ডা. জুলিয়া মার্কাস বলেন, “ঝুঁকি কম, তবে কোনো আক্রান্ত ব্যক্তির হাতে যদি তা আপনার ঘরে আসে, স্বভাবতই তার মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারে। আমার পরামর্শ হবে, ঘরে নতুন কিছু আসলেই তা যথাস্থানে রাখার পর ভালোভাবে হাত পরিষ্কার করে নিন।”

ডা. আকিকো ইওয়াসাকি বলেন, “কার্ডবোর্ড’য়ে করোনাভাইরাসের সক্রিয় থাকা সময়টা যথেষ্ট লম্বা। তাই সর্বোচ্চ নিরাপত্তার জন্য ঘরে কোনো ‘ডেলিভারি’ আসলে তা বাক্স থেকে বের করে বাক্সটি দ্রুত ময়লার পাত্রে ফেলে দিন, তৎক্ষণাত সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন এবং চেহারা স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকুন। বাক্সটিকে মুখমণ্ডল থেকে যত দূরে রাখা যায় ততই ভালো। যারা ‘প্যাকেজিং’য়ের কাজ করছেন তাদের মাধ্যমে কি বাক্সের ভেতরের জিনিস ভাইরাসে সংক্রমিত থাকতে পারে?

ডা. আকিকো ইওয়াসাকি বলেন, “সম্ভাবনা অবশ্যই আছে, তবে বাক্সের ভেতরের জিনিসের চাইতে বাক্সের বাইরের দিকেই ভাইরাস বেশি থাকবে, কারণ সেটাই অনেক মানুষের সংস্পর্শে আসবে। আর বাক্সটি আপনার কাছে পৌঁছাতে যদি কয়েকদিন সময় নেয় তবে তার ভেতরে যেই ভাইরাসই থাকুক না কেনো, ততক্ষণে তা নিষ্ক্রিয় হয়ে যাবে।” সমতল স্থানগুলো পরিষ্কার করা সম্পর্কে আপনাদের পরামর্শ কী হবে?

ডা. জুলিয়া মার্কাস বলেন, “যে জিনিসগুলো বহুবার একাধিক মানুষ স্পর্শ করে প্রতিনিয়ত, সেগুলো নিয়মত পরিষ্কার করার অবশ্যই ভালো। এই কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে ব্লিচিং পাউডারের দ্রবণ কিংবা ৭০ শতাংশ অ্যালকোহলযুক্ত দ্রবণ। ঘরে কোভিড-১৯ রোগী থাকলে তার ব্যবহার বা স্পর্শ করা প্রতিটি জিনিস বারবার পরিষ্কার করা অত্যন্ত জরুরি।


তাজাখবর২৪.কম: ঢাকা শনিবার ১৮ এপ্রিল ২০২০, ০৫ বৈশাখ ১৪২৭,২৪ শাবান ১৪৪১


এই বিভাগের আরো সংবাদ

advertisement

 

                                                  প্রধান উপদেষ্টা: ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট
                                                           সম্পাদক: কায়সার হাসান
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: আর কে ফারুকী নজরুল, সহকারি সম্পাদক: জহির হাসান,নগর সম্পাদক: তাজুল ইসলাম।
ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: মডার্ণ ম্যানশন (১৫ তলা) ৫৩ মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০।
এই ঠিকানা থেকে সম্পাদক কায়সার হাসান কর্তৃক প্রকাশিত।
কপিরাইটর্স ২০১৩: taazakhobor24.com এর সকল স্বত্ব সংরক্ষিত।
ফোন: ০৮৮-০২-৫৭১৬০৭২০, মোবাইল: ০১৮১৮১২০৯০৮, 
facebook: taaza khobor, You tube:Taaza khobor Tv

বৃহস্পতিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, 2০২3