
তাজাখবর২৪.কম: দেশ প্রেম ঈমানের অঙ্গ। নিজ জন্ম ভূমির প্রতি ভালোবাসাই হচ্ছে দেশপ্রেম। মহানবী (স.) দেশপ্রেমের কারণেই ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রিয় মাতৃভূমি ছেড়ে মদিনায় হিজরত করে যাবার সময় বার বার মক্কার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে স্বীয় অনুভুতি প্রকাশ করেছেন। হিজরতের পর থেকে বদর, উহুদ, খন্দকসহ অসংখ্য স্বাধীনতার যুদ্ধের পর হাজার হাজার সাহাবীর জীবন উৎসর্গের মাধ্যমে ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা তথা স্বদেশ বিজয় লাভ করেন। স্বদেশ প্রেম প্রীতির প্রবৃত্তি স্বাভাবিক ও চিরন্তন। ১৯৪৮-৫২ ভাষা আন্দোলন ১৯৫৪ সালের নির্বাচন ও যুক্তফ্রন্টের বিজয়, ১৯৫৫ সালের আওয়ামীলীগ গঠন, ১৯৫৮-১৯৬৪ পর্যন্ত আইউব খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলন ১৯৬৭ সালের আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ সালের ১১ দফা গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের ইয়াহিয়া খানের সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন, ১৯৭০ এর নির্বাচনী বিজয়, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন, ৭ই মার্চের বঙ্গবন্ধুর অগ্নিঝরা ভাষণ ও পরবতী ঘটনাসমূহ সব দেশ প্রেমের এক বিশাল নজির। পবিত্র কুরআনের সুরা আলে ইমরানের ২০০ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে- ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা ধৈর্য ধারন কর, বাতিল পন্থীদের মোকাবিলায় দৃঢ়তা ও অনমনিয়তা প্রদর্শন কর, সত্যের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাক এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাক। আশা করা যায় তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে। অত্র আয়াতের মর্ম হলো- সাম্রাজ্যের সীমান্ত রক্ষণাবেক্ষণ করে শত্রুদেরকে নিজ শহরে প্রবেশ করতে না দেয়া। বিশ্লেষণে দেখা যায় ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করা সর্বজন স্বীকৃত বলে বিবেচিত। ৬২৫ খ্রিষ্টাব্দের ২১ মার্চ মতান্তরে ২৩ মার্চ মতান্তরে ২৬ মার্চ ঐতিহাসিক উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এ যুদ্ধে মক্কার কাফের সম্প্রদায় মুসলমানদের উপর চরম বর্বর হত্যাকান্ড চালায়। ইবনে কামিয়ার প্রস্তরাঘাতে বিশ^নবী হযরত মোহাম্মদ (স.) মারাতœক আহত হন। তাঁর পবিত্র ২টি মতান্তরে ৪টি দাঁত শহীদ হয়। পতাকাবাহী মুসআব (রাঃ) নিহত হন। হযরত হামজা (রাঃ) সহ ৭৪ জন (৭০জন আনসার ও ৪ জন মুহাজির) সাহাবী শাহাদাতবরণ করেন। এমনি এক ক্রান্তিলগ্নে মহান আল্লাহ তায়ালা উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যেমে শত্রুদের বিরুদ্ধে অবিচল থাকার নির্দেশ দিলেন। মহানবী (সঃ) বলেছেন- “রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেয়া পৃথিবী ও তার মধ্যকার সবকিছুর চেয়ে উত্তম”। এতে মুসলমানদের ঈমানী শক্তি বৃদ্ধি পেল। তাঁরা একনিষ্ঠ ভাবে স্বাধীনতা সংগ্রাম চালিয়ে দীর্ঘ ৫ বছর যাবত যুদ্ধ করে ৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে স্বদেশ ভূমি মক্কা বিজয় করেন।
ঐতিহাসিক তাবুক যুদ্ধের প্রাক্কালে বিশ^নবী (স.) সমস্থ সাথীদের যার যা আছে তা-ই নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য আহবান করেন। তাঁর আহবানে হজরত আবু বকর (রাঃ) নিজের সকল কিছু নিয়েই নবীজির পবিত্র কদমে ঢেলে দিয়ে যুদ্ধের ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েন। শত্রুদের মোকাবিলায় একনিষ্ঠভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার এক ঐতিহাসিক নজির তাবুকের যুদ্ধ। বাংলাদেশের মানুষের দেশ প্রেম ও স্বাধীনতার স্বপ্নকে নস্যাৎ করার জন্য পাক হানাদার বাহিনী বাঙ্গালী জাতির উপর অত্যাচারের স্টিম রোলার চালায়। এ সময় ৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রেসকোর্স ময়দানে আকাশ বাতাশ প্রকষ্পিত করে ঘোষণা দেন ‘তোমাদের যার যা কিছু আছে তা নিয়ে শত্রুর মোকাবেলায় ঝাঁপিয়ে পড়ো। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বঙ্গবন্ধুর এ ঘোষণার পর বাঙ্গালী জাতি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে উঠলে মারনাস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ২৫ শে মার্চ দিবাগত রাত “অপারেশন সার্চলাইট” নামে পাক-হায়নার দল বাঙ্গালী জাতির উপর নির্মম হত্যাকান্ড চালায়। ঢাকা নগরী পরিণত হয় ভয়াল মৃত্যুপুরীতে। গ্রেপ্তার করা হয় বঙ্গবন্ধুকে। গ্রেপ্তারের পূর্বে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। তিনি বাঙ্গালী জাতিকে ভয় না পেয়ে দ্বিধাহীন চিত্তে শত্রুর মোকাবেলা করার জন্য আহবান জানান। বঙ্গবন্ধুর সেদিনকার ঘোষণা পবিত্র কুরআনের উপরোক্ত বাণীকে স্মরণ করিয়ে দেয়। -‘হে ঈমানদারগণ! ধৈর্য ধারণ কর, বাতিল পন্থীদের মোকাবিলায় দৃঢ়তা ও অনমনিয়তা প্রদর্শন কর, সত্যের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকো এবং আল্লাহকে ভয় করতে থাকো। আশা করা যায় তোমরা কল্যাণ লাভ করতে পারবে’। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণার পর মুক্তিকামী বাঙ্গালী গড়ে তোলে প্রতিরোধ আন্দোলন মুক্তি সংগ্রাম। সুদীর্ঘ ৯ মাস বিরামহীন মুক্তি সংগ্রামের মাধ্যমে ৯৪ হাজার পাক সৈন্যের আত্মসমর্পনের পর ১৬ ডিসেম্বর সূচিত হয় বাঙ্গালি জাতির বিজয়। সার্বিক বিবেচনায় নিশ্চিত ভাবে বলা যায় ইসলামের দৃষ্টিতে স্বাধীনতার যুদ্ধ সর্বজন স্বীকৃত।
মোঃ ফখরুল ইসলাম আনছারী ,সুপার, শেখ ফজিলাতুন্নেসা ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসা, মোবাইলঃ ০১৩০৯১১৩৫৭৪
তাজাখবর২৪.কম: ঢাকা মঙ্গলবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ৫ বৈশাখ ১৪৩০,২৬ রমজান ১৪৪৪